কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয়

 ক্ষতি হয় ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জানাবো। তাহলে কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয় কিনা ভালোভাবে জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

হলুদ দীর্ঘকাল ধরে ওষুধী গুনের বা সুবিধার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কারকিউমিন, যা হলুদের প্রধান বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান, এটি এমন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার প্রদাহ বিরোধী ক্ষমতা রয়েছে। যাইহোক, যদিও হলুদ এবং কারকিউমিন সাধারণত খাওয়া নিরাপদ, তবে খুব বেশি ভাল জিনিসও কখন কখন বিপজ্জনক হতে পারে। তাহলে চলুন নিচে জেনে নেওয়া যাক কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয়।

সূচিপত্রঃ কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয়

আপনার প্রতিদিন কতটুকু হলুদ খাওয়া উচিত?

হলুদের গুঁড়া হল একটি উজ্জ্বল হলুদ পাউডার যা পাকা হলুদের রাইজোম থেকে তৈরি হয়। প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ খাবারের রঙ এবং স্বাদের জন্য হলুদ ব্যবহার করত আবার সেইসাথে প্রসাধনী এবং চিকিৎসা কাজেও ব্যবহারের করতো। হলুদ শুধু একটা মশলা নয়। এটি একটি প্রদাহ বিরোধী, ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভেষজ যা হাজার হাজার বছর ধরে ওষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

এটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ভেষজ ঐষধ কিন্তু আমি আপনাকে হলুদ খাওয়ার ক্ষেত্রে খুব সতর্কতা অবলম্বন করার কথা, বিশেষ করে যদি আপনার অন্যান্য অসুখের জন্য প্রেসক্রিপশনের ওষুধ খেয়েথাকেন তখন। আপনি প্রতিদিন সর্বোচ্চ যেটুকু হলুদ খেতে পারবেন তা হল 1200 মিলিগ্রাম। এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, তবে আপনি যদি গর্ভবতী হন বা হলুদে আপনার কোনো সমস্যা নাই তাহলেই। এক চা-চামচ হলুদে 200 মিলিগ্রাম কারকিউমিন থাকে, তাই আপনার হলুদের গুঁড়ো খাওয়া প্রতিদিন ৬ চা-চামচের বেশি না হওয়া উচিত।

কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয়

আমরা প্রায় সবাই জানি কাঁচা হলুদে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বা ঔষধী গুন রয়েছে। এতে কারকিউমিন নামক রাসায়নিক থাকে, যা ব্যথা এবং ফোলা কমাতে পারে। কাঁচা হলুদ খেতে উষ্ণ, তিক্ত স্বাদ এর এবং এটি বেশির ভাগ সময় তরকারিতে রং দেওয়ার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। কাঁচা হলুদের অনেক ধরনের উপকারিতা থাকা সত্তেও অনেকের কাঁচা হলুদ খেলে ক্ষতি হতে পারে। 

পেট খারাপ হতে পারে

আমরা সবাই জানি, হলুদ বা হলদি তাপ উৎপন্ন করে এবং শরীরকে উষ্ণ করে। তাই আপনি যদি খুব বেশি পরিমাণ কাঁচা হলুদ খেয়ে থাকেন তাহলে অতিরিক্ত গরমের জন্য পেটের সমস্যা হতে পারে। আবার আপনার পেটে মারাত্মক প্রদাহ হতে পারে যা থেকে ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে। কিছু লোক পেটে ব্যথা এবং জ্বালা ও অনুভব করে।

বেশি পরিমাণ কাঁচা হলুদ খাওয়ার ফলে পেট খারাপ, বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া হতে পারে। কিন্তু সব মানুষের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায় না। আপনার যদি হলুদ খাওয়ার পরে এর কোনো একটি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আপনাকে খুব সাবধানে এবং খুব অল্প পরিমাণ কাঁচা হলুদ খেতে হবে। এতে আপনি হলুদের ভিটামিন ও পাবেন এবং আপনার কোনো ক্ষতিও হবে না।

বেশি রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়

আমরা অনেকেই জানিনা যে কাঁচা হলদের বেশিপরিমাণ রক্ত জমাট বাঁধা কমিয়ে রক্ত পাতলা করে। তাই যাদের রক্তপাত জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষত এবং রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। 

হলুদের সব থেকে সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। হলুদের অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট ক্ষমতা রয়েছে এবং তাই অস্ত্রোপচারের সময় এবং পরে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অস্ত্রোপচারের কমপক্ষে ২ সপ্তাহ আগে আপনাকে হলুদ খাওয়া বন্ধ করতে হবে কারণ এটি রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং পরেও ক্ষত শুকানো পর্যন্ত খাওয়া যাবে না। কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয় তার মধ্যে এটি একটি হলুদ নিয়মিত খাওয়ার সময় আমাদের এটি মনে রাখতে হবে।

পিত্তথলির পাথর বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায়

কাঁচা হলুদে কিছু পরিমাণে অক্সালেট থাকে, যা পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যারা নিয়মিত কাঁচা হলুদ খায় তাদের প্রস্রাবে অক্সালেটের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে একটা গবেষণায় দেখা গেছে। 

কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়

পিত্তথলির পাথরের মতো, খুব বেশি কাঁচা হলুদ কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে কারণ এতে অক্সালেট রয়েছে। হলুদের মধ্যে থাকা অক্সালেটগুলি ক্যালসিয়ামের সাথে বিক্রিয়া হয়ে ক্যালসিয়াম অক্সালেট তৈরি করতে পারে, যা অদ্রবণীয় এবং এভাবে কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে।তাই আপনার কিডনির সমস্যা থাকলে হলুদ খাওয়া এড়ানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

বেশি কাঁচা হলুদ খেলে এই সমস্যা মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় তাই মহিলারা, কিডনির ক্ষতি এড়াতে এই কাঁচা হলুদ অতিরিক্ত খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলুন। কাঁচা হলুদের অনেক উপকারের সাথে সাথে কিছু কিছু মানুষ যাদের পিত্তথলির এবং কিডনির সমস্যা আছে তাদের জন্য বেশি পরিমাণ হলুদ খাওয়া নিরাপদ নয় বরং ক্ষতি হতে পারে। কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয় তা একটু হলেও জানতে পেরেছেন আশা করি।

গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলার জন্য ঠিক নয়

হলুদ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খাবারে মশলা হিসাবে খাওয়া নিরাপদ, তবে গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমাণ কাঁচা হলুদ খাওয়া এড়ানো উচিত। গর্ভবতী এবং দুধ খাওয়ানো মহিলাদের উপর কাঁচা হলুদ খাওয়া যাবে কিনা তার সেরকম কোনো গবেষণা করা হয়নি। এটা গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের জন্য কতটা খারাপ তার জন্য আরো গবেষণা প্রয়োজন।

যদিও হলুদ খাওয়া প্রায়ই নিরাপদ তবে এটা মনে করা হয় যে এটি গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয়। গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের হলুদ খাওয়া এড়ানো হয়। 

এলার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে

কিছু মানুষের কাঁচা হলুদে থাকা কিছু যৌগ থেকে অ্যালার্জি হতে পারে যা ফুসকুড়ি এবং চুলকানি এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। এই সমস্যা শুধু খেলেই নয় বরং ত্বকে ব্যবহারের ফলেও হতে পারে। তাই আপনি কাঁচা হলুদের উপকারিতা পেতে অল্প পরিমাণ খেতে পারেন। অনেক বেশি পরিমান খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ হতে পারে!

হ্যা এইটা সত্যি! যে কারকিউমিন একটি অলৌকিক যৌগ বা উপাদান, যার প্রচুর পরিমান উপকারিতা রয়েছে, তবে এটি অনেকের গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং এর মানে হল আপনার বমি বমি ভাব হতে পারে। হলুদে কার্কিউমিন নামক উপাদানটি ত্বকের জন্য খুব উপকারি যা ত্বক উজ্জ্বল করতে পারে। এই কারণেই অনেকে মুখের বা শরীরের অন্যান্য স্থানে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে কারো কারো এটা জ্বালা বা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। অতএব, ত্বকে হলুদ লাগানোর আগে আপনাকে পরীক্ষা করে নিতে হবে।

শেষ কথা

অন্য যে কোনও ভেষজ বা মশলারবা ওষুধ, এর মতো খুব বেশি কাঁচা হলুদও ক্ষতিকারক হতে পারে। কিন্তু কাঁচা হলুদের অনেক উপকারিতা রয়েছে তারপরেও কিছু মানুষের জন্য এটা ক্ষতিকর হতে পারে। যদিও বিরল ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ কিছু লোকের মধ্যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো হতে পারে চামড়াতে ফুসকুড়ি, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব,মাথাব্যথা এবং আরো কিছু সমস্যা। আজকে আমাদের পোস্টের বিষয়ই হল কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয়। আশা করি কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয় তা উপরের আলোচনা থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন। ২২৪৯৮

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url