OrdinaryITPostAd

আতা ফলের ঔষধি উপকারিতা

আতা ফলের ঔষধি উপকারিতা রয়েছে প্রচুর। আপনারা অনেকেই হয়তো আতা ফলের ঔষধি উপকারিতাগুলো সম্পর্কে জানেন না। তাই সকলের সুবিধার্থে এই আর্টিকেলটিতে আতা ফলের ঔষধি উপকারিতা গুলো মেডিকেলের বিভিন্ন গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে উল্লেখ করেছি। সুতরাং, আতা ফলের ঔষধি উপকারিতা জানতে হলে পুরো পোস্টটি পড়ে ফেলুন। 
আতাফল আমাদের নিকট অত্যন্ত সুপরিচিত একটি ফল। গ্রীষ্মকালে এই ফলটি আমাদের দেশে অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে আতা ফলের বহুবিধ পুষ্টিগুণ আবিষ্কার করেছেন। আতা ফলের ঔষধি উপকারিতা গুলোর সুফল ভোগ করার জন্য তাই নিয়মিত আতা ফল খাওয়া যেতে পারে। এই পোস্টে আপনারা আতা ফলের ঔষধি উপকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবেন। তাই দেরি না করে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। 

আতা ফলের বিভিন্ন পুষ্টি গুনাগুন

আতা আমাদের অত্যন্ত সু পরিচিত একটি ফল। এই ফল একাধারে আমাদের যেমন পেট ভরায় তেমনি এর অনেক পুষ্টি গুণাগুণও রয়েছে। আতা ফলে বিভিন্ন ঔষধি গুন থাকার কারণে, চিকিৎসকরা রোগীদের আতাফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এখন চলুন আতা ফলের ভেতরে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে তা আমরা সংক্ষিপ্তভাবে জেনে ফেলি। এখানে আমরা আতা ফলের প্রতি 100 গ্রামে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান উপস্থিত তা উল্লেখ করব।
  • পানি ৭২ গ্রাম 
  • শর্করা ২৫ গ্রাম 
  • প্রোটিন ১.৭ গ্রাম 
  • ভিটামিন এ ৩৩ আইইউ
  • ভিটামিন সি ১৯২ মিলিগ্রাম 
  • থিয়ামিন ০.১ মিলিগ্রাম 
  • নিয়াসিয়ান ০.৫ মিলিগ্রাম 
  • পান্টোথেনিক এসিড ০.১ মিলিগ্রাম 
  • ম্যাগনেসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম 
  • পটাশিয়াম ৩৪২ মিলিগ্রাম 
  • সোডিয়াম ৪ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস ২১ মিলিগ্রাম 
  • রিবোফ্লাবিন ০.১ মিলিগ্রাম

আতা ফলের প্রতি 100 গ্রাম উপাদানে এ সকল পুষ্টি উপাদান গুলো বিদ্যমান থাকে। সুতরাং আপনারা দেখে নিলেন আতাফল বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান একসাথে পেতে চাইলে আতাফল খাওয়ার বিকল্প নেই। আপনারা বেশি বেশি আতা ফল খেতে চাইলে বাড়ির আশেপাশে আতা ফল গাছ রোপন করতে পারেন। পোস্টের পরবর্তী অংশে আপনারা, আতা ফলের ঔষধি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

আতা ফলের ঔষধি উপকারিতা

 তবে চলুন আর দেরি না করে আতা ফলের ঔষধি উপকারিতা কি কি রয়েছে তা জেনে ফেলি। 

  • আতাফলে অনেক উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তাই আতা ফল খুব সহজেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করতে পারে। আতাফল-এ বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান গুলো যেকোনো রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গঠনে সক্ষম।
  • আতা ফল এ থাকা ম্যাগনেসিয়াম মাংস পেশির জড়তা কাটাতে ভূমিকা রাখে। একই সাথে আতাফলে থাকা পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি-৬ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। সুতরাং,  হার্টের রোগীদের জন্য আতাফল খাওয়া অপরিহার্য।
  • আতাফল খেলে তা শরীরে অনেক ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে। আর ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়কে সুগঠিত করতে ভূমিকা রাখে। তাই হাড়ের গঠন বজায় রেখে হাড়কে যথাযথ মজবুত রাখার জন্য অবশ্যই আতা ফল খাওয়া উচিত।
  • আতাফল শরীরের DNA ও RNA সংশ্লেষণ, দৈহিক শক্তি উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও খনিজ পদার্থসমূহ সরবরাহ করতে পারে। আতাফলের ঔষধি গুনাগুন আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
  • চুল ও ত্বকের যত্নে আতা ফল বেশ কার্যকরী। আতাফলে উপস্থিত এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ফ্রি র‌্যাডিক্যাল নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ত্বক দীর্ঘদিন ভালো রাখতে আতাফল সহায়তা করে।
  • আতাফল অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে সমগ্র দেহে রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। আতফল ফুসফুস ও হৃদপিন্ডের মাঝে অক্সিজেন সরবরাহেও অবদান রাখে।
  • শরীরে পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা করতে আতাফলে থাকা খাদ্য উপাদনগুলো বেশ উপকারী। আপনি আতাফল খেলে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদানই কিছুনা কিছু পরিমাণে পেয়ে যাবেন। তাই আতাফল সুষম খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত।
  • যাদের চোখের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য আদর্শ ঔষধ হতে পারে এই আতাফল। কারণ আতা ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও রিবোফ্লাবিন রয়েছে, যেটি একজন ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
  • দেহের হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করার জন্য আতা ফলে উপস্থিত ফসফরাস অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তার আতা ফল খেলে বাড়তি সুবিধা পাবেন।
  • মাথা থেকে উকুনকে দূর করার জন্য আতা ফলের পাতা ও পানি মিশ্রিত করে মাথায় লাগাতে পারেন। তাতে যদি কাজ না হয় তবে আতা ফলের পাতা বেঁটে কয়েকদিন পর পর মাথায় নিয়মিত লাগাতে পারেন। তবে আতাফলের পাতা যেন চোখে না লাগে সেদিকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। কারণ আতাফলের পাতা চোখে লাগলে চোখ জ্বালাপোড়া করতে পারে। অতএব আপনারা আতা ফলের ওষধি উপকারিতা গুলো জেনে নিলেন।

আতাফল এর অপকারিতা সমূহ

পোস্টের পূর্ববর্তী অংশ থেকে আপনারা আতা ফলের ঔষধি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত হয়েছেন। কিন্তু আপনারা কি জানেন আতা ফলের কিছু অপকারী দিক রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই সকলের আতা ফলের অপকারি দিকগুলোও জেনে রাখা জরুরি। নিচে আপনারা আতা ফলের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে পয়েন্ট আকারে জানতে পারবেন।
  • আতা ফলের বীজ ও কোষগুলো আমাদের চোখের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি যদি কোন ভাবে আমাদের চোখ স্পর্শ করে তবে তা চোখের জন্য বিশাল ক্ষতি সাধন করতে পারে। আতা ফল চোখে লাগলে চোখ জ্বালাপোড়া করা, চোখ খচ খচ করা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। 
  • আতা ফলের বীজ কখনো শরীরের সংস্পর্শে রাখবেন না। কেননা এটিতে উপস্থিত বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান গুলো দেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। 
  • যাদের একটুতেই ঠান্ডা লাগার মত অবস্থা সৃষ্টি হয় তাদের জন্য আতা ফল না খাওয়াই শ্রেয়। কেননা আতা ফল অনেক ঠান্ডা একটি ফল। 
  • যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তারাও আতাফল থেকে দূরে থাকতে পারেন। অনেক সময় আতাফল আমাদের দেহে এলার্জির সৃষ্টি করে।
  • অতিরিক্ত আতাফল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ডায়রিয়ার ঝুঁকি এড়াতে চাইলে আতাফল বর্জন করতে পারেন।
  • আপনার খোসাও ভিজে অনেক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ থাকে যা সরাসরি আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সেজন্য আতা ফল খাওয়ার সময় অবশ্যই উচ্ছিষ্ট অংশ দূরে ফেলে দিবেন। 

আতা ফল কিভাবে খাবেন

বন্ধুরা নিশ্চয়ই আতা ফলের ঔষধি উপকারিতা সমূহ এখন আর আপনাদের সামনে অজানা নয়। সেজন্য ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক সপ্তাহে অন্তত একবার আতা ফল খেতে পারেন। পেকে যাওয়া আতাফল হালকা চাপ দিলেই তা ভেঙে যাবে। তারপর আপনারা খোসা ছাড়িয়ে তা অনায়াসে খেতে পারবেন। অনেকে আতাফলের জুস ও সালাদ বানিয়ে খেতে পছন্দ করে থাকেন। তবে সরাসরি গাছ থেকে নামিয়ে পাকা আতাফল দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে আরও বেশি উপকার পাওয়া যাবে। 

শেষ কথা 

আপনারা যদি এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তবে নিশ্চিতভাবে আতাফলের ফলের ঔষধি উপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিশদ ধারণা পেয়ে গেছেন। তাই আতাফল থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো গ্রহণ করার জন্য সপ্তাহে অন্তত একবার আতা ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সর্বোপরি এই পোস্টটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন। আর দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন টিপস এন্ড ট্রিকস বিষয়ক পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url