ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি - ব্লাড ক্যান্সারের ধরন কি রকম

আপনি যদি ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি সেটি না জেনে থাকেন তাহলে খুব শীঘ্রই জেনে নিন। এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি তা জানতে পারবেন। ব্লাড ক্যান্সারের সংক্রমণ থেকে শ্বেত রক্ত কণিকাকে বাঁচাতে চলুন জেনে আসি ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি হতে পারে। 
যদি কখনো আপনি ব্লাড ক্যান্সারে ভোগেন তাহলে আপনার শরীরের রক্তের যেই শ্বেত রক্ত কণিকাগুলো রয়েছে সেটি সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা। কারণ এই শ্বেত রক্ত কণিকাগুলো আপনার শরীরে অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করে থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন নষ্ট হয়ে যায় তখন খুব সহজেই একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যায়। 

পেজ সূচিপত্র                                 

ব্লাড ক্যান্সার কাকে বলে

ব্লাড ক্যান্সার হচ্ছে এমন এক ধরনের একটা রোগ যা মানুষের শরীরের রক্তের সাথে মিশে থাকে এবং সুযোগ পেলে শ্বেত রক্ত কণিকাকে আক্রমণ করে থাকে। কিন্তু এই শ্বেত রক্ত কণিকায় আমাদের শরীরের অ্যান্টিবডি তৈরিতে অনেক সাহায্য করে থাকে। কিন্তু যখন এই শ্বেত রক্তকণিকা লিউকোমিয়াতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। 

ব্লাড ক্যান্সারের ধরন কি রকম তা বুঝে শ্বেত রক্তকণিকা গুলো তাদের সব ধরনের স্বাভাবিক কার্যক্রিয়া হারিয়ে ফেলে। ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে থাকে এবং রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ পরিস্থিতির দিকে চলে যায়। এই ক্যান্সারের সংক্রমণ এর ফলে ভিন্ন ভিন্ন রক্তকণিকা অনুচক্রিকা ও শ্বেত রক্তকণিকা এবং লিম্ফোসাইট গুলো অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়।

ব্লাড ক্যান্সারের ধরন কি রকম

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি ও ব্লাড ক্যান্সারের ধরন কি রকম তা জানতে হবে। বিশেষ করে ধরন তিন রকমের হয়ে থাকে তার মধ্যে যেই ধরণগুলো ব্লাড ক্যান্সারের সৃষ্টি করে থাকে চলুন সেগুলো জেনে আসি।

১। মেলোমাঃ 
প্লাজমা কোষের যেই ধরনের ক্যান্সার হয় তার নাম হচ্ছে মেলোমা। এই প্লাজমা কোষগুলিতে যখনই এন্টিবডি তৈরি হয়, তখন সংক্রমণ না হওয়ার জন্য এগুলো লড়াই করে থাকে। 

আর সেই সময় কোষের হাড়গুলির মধ্যে থেকে এগুলো সংগ্রহের ফলে একাধিক মেলোমা সৃষ্টি হয়। যার মধ্যে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় এবং রক্তে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে আপনার শরীরে ক্যান্সার উৎপাদন করে।

২। লিম্ফোমাঃ 
এটি এমন একটি রোগ যা আপনার শরীরের সিস্টেমকে প্রভাবিত করতে পারে এবং আপনার শরীরে ব্লাড ক্যান্সারের ধরন কি রকম যেই পরিমাণ তরল অপসারণ করে সেটি থেকে ইমিউন কোষের উৎপাদন করে থাকে। এখানে হজকিনের লিম্ফোমা নামে এক ধরনের কোষ থাকে।

যা ইমিউন কোষ থেকে শুরু হওয়ার ফলে আক্রান্ত রোগীদের বড় লিম্ফোসাইট থেকে রিড স্টার্নবার্গ কোষ সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়, 
৩। শ্বেত রক্ত কণিকা বা লিউকেমিয়াঃ 
শ্বেত রক্ত কণিকাতে যেই ধরনের লিউকেমিয়া পাওয়া যায় তা খুবই দ্রুত উৎপাদন করে থাকে। শ্বেত রক্ত কণিকাতে লিউকেমিয়া তিন ধরনের হয় যেমন তীব্র লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া, তীব্র মাইলয়েড লিউকেমিয়া ও ক্রনিক লিম্ফোসাইট লিউকেমিয়া। বিশেষ করে তীব্র লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া হয়ে থাকে।

যাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকের কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি বেশি নিয়েছেন। অতিরিক্ত বিকিরণের সংস্পর্শে গিয়েছেন এবং ডাউন সিনড্রোম বা কোন জেনেটিক ব্যাধি রয়েছে। তীব্র মাইলয়েড লিউকেমিয়া রয়েছে যাদের মধ্যে কেমোথেরাপি চিকিৎসা নিচ্ছেন। অথবা বেনজিনের মতো বিষাক্ত পদার্থ এর কাছাকাছি রয়েছেন। ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি না জেনে যারা ধূমপান করে থাকেন। 

তাদের ক্ষেত্রে এই রোগ হতে পারে। এছাড়াও তীব্র লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া সত্তর বছরের বেশি বয়সী লোকদের ক্ষেত্রেও যদি পারিবারিকভাবে পূর্বে থেকে থাকে তাহলে হতে পারে। অথবা কীটনাশকের মতো পদার্থের কাছাকাছি এসেছেন তাদের ক্ষেত্রেও এই ব্লাড ক্যান্সারের ধরন কি রকম তা না জানলে ক্রনিক লিম্ফোসাইট লিউকেমিয়া হতে পারে।

কিভাবে ব্লাড ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়

আপনার যখন ব্লাড ক্যান্সারের বিভিন্ন লক্ষণ শরীরে প্রকাশ পেতে থাকবে, তখন আপনি যদি চান ব্লাড ক্যান্সার নির্ণয় করতে তাহলে আপনাকে চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। বিশেষ করে চিকিৎসক আপনাকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা দিতে পারে। অর্থাৎ রক্ত পরীক্ষা, শারীরিক পরীক্ষা, অস্থিমজ্জা পরীক্ষা, লিম্ফ নোড নির্ণয় করতে দিতে পারে।


এছাড়াও ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি জেনে রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা দিতে পারে যা সিটি স্ক্যান, পিইটি স্ক্যান অথবা এক্সরে এর মাধ্যমে করা হয়। আপনার রক্তকোষে শ্বেত রক্ত কণিকা এবং লোহিত রক্তকণিকার পরিমাপের জন্য এই পরীক্ষাগুলো করা হয়। আপনার রক্তে সুগার লেভেল কত হতে পারে বা কোলেস্টেরলের মাত্রা কত আছে।

প্রোটিন এবং হরমোন কি পরিমানে আছে সেই জিনিসগুলোকে পরিমাপ করা হয়। এছাড়াও সাদা রক্ত কোষের সংখ্যা ও আকৃতি এগুলো পরিমাপ করা হয়। 

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি

ব্লাড ক্যান্সারের ধরন কি রকম তার ওপর ভিত্তি করে ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি জেনে একজন ব্লাড ক্যান্সার রোগীর বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে লিউকেমিয়ার বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায় যার মধ্যে হলো -

  • ধীরে ধীরে আপনার ওজন কমতে থাকবে।
  • কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে।
  • ঘন ঘন মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হতে পারেন।
  • হঠাৎ করেই লিভার বড় হয়ে যাওয়া।
  • খুব সামান্য কিছুতেই রক্তপাত হতে পারে।
  • শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়ে আসতে পারে।
  • হাড়ে ব্যথা হতে পারে বা শরীরে হালকা চাপেই ব্যথা করতে পারে।
  • নাক দিয়ে খুব বেশি রক্ত ঝরতে পারে।

ব্লাড ক্যান্সারের প্রধান কারণ কি

ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণটি হলো জেনেটিক সিস্টেম পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। যার ফলে মিউটেশনের মাধ্যমে শরীরের রক্তকণিকা বেড়ে যায়। প্রথম দিকে এই সমস্যাটি অস্বাভাবিকভাবে হতে থাকে। 

যখনই এই ক্যান্সারের কোষগুলো ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন স্বাভাবিক কার্যক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়। যখন আপনার লিম্ফোট্রপিক ভাইরাস লিউকেমিয়া এর সাথে সরাসরি যুক্ত হয়ে যাবে, তখন ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বেনজিনের মাত্রা যদি অনেক বেশি বেড়ে যায় বিশেষ করে যেমন চুলের রং পরিষ্কার করার জন্য এটি ব্যবহার হয়।

এই ক্ষেত্র থেকেও ব্লাড ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়াও ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি না জানলে কৃত্রিম আয়নাইজিং বিকিরণ হলে অর্থাৎ ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে রেডিয়েশন থেরাপি খুবই ক্ষতিকর। যারা কেমোথেরাপি নিয়ে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রেও লিউকেমিয়া অর্থাৎ ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সিডাউন সিনড্রোমে ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

কিভাবে ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাবেন

আপনি যদি আপনার ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে নিয়ে আসতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছু বিষয়ে মেনে চলতে হবে। অত্যন্ত সাবধানতার সাথে ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি জেনে এবং ব্লাড ক্যান্সারের ধরন কি রকম তা জেনে প্রথম স্টেজেই ক্যান্সারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা প্রয়োজন। ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর বিষয়গুলো যেমন,
  • আপনার ওজনকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে।
  • নিয়মিত প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে।
  • ফল শাকসবজি ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।
  • নিজেকে সবসময় স্ট্রেস মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
  • ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণের উপর বিবেচনা করে পরীক্ষা করাতে হবে। 
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় ত্যাগ করতে হবে।

শেষকথা

আশা করছি এই পোস্টে নিশ্চয়ই ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি হতে পারে, ব্লাড ক্যান্সারের ধরন কি রকম সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। বিস্তারিত জেনে ভালো লেগে থাকলে ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে আপনার আশেপাশের বন্ধুদের সচেতন করতে পারেন। পোস্টের নিচের অংশে মন্তব্য করে আমাদের পাশেই থাকুন। ২৫২৭৫

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url